Cox's Bazar:
Shylet Tea State:-
Nijhum Dip:-
নিঝুম দ্বীপ :-
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আর এক নাম নিঝুম দ্বীপ !!! চারদিকে সমুদ্র, নদীর মোহনা, কেওড়া বন আর হাজার হাজার হরিণের অভয়াশ্রম এই নিঝুম অরণ্য !!! সম্ভাবনাময় বাংলাদেশে নিঝুম দ্বীপ একটি ছোট্ট দ্বীপ। নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার অন্তর্গত এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি নিঝুম দ্বীপ। জানাযায় দ্বীপটির প্রাচীন নাম ছিল চর ওসমান। ওসমান নামের একব্যক্তি মহিষের পাল নিয়ে সর্বপ্রথম এই দ্বীপে বসবাস শুরু করেন, এজন্য তার নাম অনুসারে এই দ্বীপের নাম ছিল চর ওসমান। এই দ্বীপটি চারটি ছোট ছোট দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত। চৌদ্দ হাজার পঞ্চাশ (১৪০৫০) একরের নিঝুম দ্বীপে বাংলাদেশ স্বাধীনের আগে কেউ বসবাস করত এমন কোন নজির নেই। কিন্তু বর্তমান সময়ে এই দ্বীপের সার্বিক দিক বিবেচনা করে দেখা যায় যে, দ্বীপটি অত্যন্ত নিরব এবং শান্ত পরিবেশ। তাই এই দ্বীপের পরিবেশ অনুযায়ী এর নামকরণ করা হয়েছে- নিঝুম দ্বীপ। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা এই বনটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি সুন্দর পিকনিক স্পট।
দ্বীপ ভ্রমণে কেন?
প্রাকৃতিক সৌন্দযের এই দ্বীপটি এদেশের যতগুলো সুন্দরতম প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্র আছে তার মধ্যে অন্যতম। হরিণের দল এই দ্বীপের প্রধান আকর্ষণ। এই দ্বীপে হরিণের সংখ্যা প্রায় চল্লিশ (40) হাজারের কাছাকাছি। এটা কিভাবে সম্ভব যে, নিঝুম দ্বীপে যাবেন আর হরিণের পাল মনভরে দেখবেন না !!! হরিণের দল হৈ-হুল্লোড় কিংবা সমান্য শব্দে পালিয়ে যায়। সেজন্য এখানে নিঃশব্দে চলাফেরা করতে হয়। এখানকার হিংস্র প্রাণী বলতে বুনো কুকুর আর সাপ ছাড়া তেমন কিছু চোখে পড়ে না। এই দ্বীপের আর একটি মনমুগ্ধকর দিক হলো সকালে ঘুম ভাঙ্গে পাখির কলকাকলীতে! সকালে সুন্দর সূর্যদয়, দুপুরের রোদে বনের ভিতরের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ যেন মেজাজটাকে অনেকটা ফুরফুরে করে দেয়।
উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানসমূহ:-
বুনো কুকুর এবং সাপের অভয়াশ্রম সাথে পাখ-পাখালির কলকাকলিতে এই বনের সবুজ ঘাস মাড়িয়ে সারাদিন দৌড়ে বেড়ায় চিত্রা হরিণের পাল। গাছের পাতার ফাক দিয়ে ধনুক থেকে বেরিয়ে আসা তীরের মত সূর্যালোকের ঝিলিক, চিত্রা হরিণের দল !!! এ যেন প্রাকৃতিক পরিবেশে সৃষ্টিকর্তার এক অপার মহিমা। চিত্রা হরিণের মায়াবী চোখ দেখে যে কেউ থমকে দাড়াবেন। এখানে বিকাল আসে তার মায়াবী রূপ নিয়ে। সন্ধ্যায় যখন কবিরার চরের উপর দিয়ে সূর্য ডুবতে শুরু করে, সেই দৃশ্য আপনার কিংবা আমার জীবনের সব থেকে শ্রেষ্ট সূর্যাস্ত হতেই হবে !!! এখানে রাত আসে আকাশের এক ফালি চাঁদের আলো তার সৌন্দর্যের প্রাচুর্য আর ঐশ্বর্য নিয়ে। এদৃশ্য দেখে মনে হয় যেন পৃথিবীর মাঝে এক টুকরা স্বর্গ। আসলে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন হবে।
এই দ্বীপে আছে পয়ত্রিশ (৩৫) হাজার প্রজাতির পাখি। এছাড়াও শীত মৌসুমে অতিথি পাখিদের অভয়ারোণ্য হয়ে ওঠে এই দ্বীপের প্রাকৃতিক বনভূমি।
এই দ্বীপে নিয়মিত জোয়ার ভাটা কারণে এখানকার জমিতে পলিমাটির পরিমান বেশি, সেজন্য জমি খুবই উর্বর।
এই বনের পাখিদের একমাত্র খাদ্যের উৎস জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা মাছ ও পোকামাকড়। এছাড়াও এই বনে রয়েছে তিতাল্লিশ-পয়তাল্লিশ (৪৩-৪৫) প্রজাতির লতাগুল্ম এবং একুশ- বাইশ (২১-২২) প্রজাতির বিভিন্ন প্রকার গাছ-গাছালি।
যাতায়াত মাধ্যম:-
বাস কিবা ট্রেন যেটা আপনার পছন্দ!
ট্রেনে কমলাপুর রেলওয়ে জংশন হতে নোয়খালী রেলওয়ে স্টেশন।
বাসে সায়েদাবাদ বাস টারমিনাল হতে সোনাপুর জিরো পয়েন্টে নামতে হবে। সেখান থেকে চেয়ারম্যান ঘাট। লোকাল বাস কিংবা সি এন জি অটো রিক্সা ধরে নলচিরা ঘাট। নলচিরা ঘাট থেকে জাহাজমারা বাজার পর্যন্ত পুরোটাই নিঝুম দ্বীপে যাওয়ার ঘাট।
থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা:-
নিঝুম রিসোর্টে ভালো থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা আছে।
এছাড়া নামার বাজারে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য খাবার হোটেল নেই। তবে সাদামাটার মধ্যে খেতে পারবেন। যেটা বলার অপেক্ষা রাখে না, সেটা হলো খাবার আগে দরদাম করে নিতে ভুলে যাবেন না।
সবশেষে বলতে পারি, শহুরে জীবনের একঘেয়েমি, ইট-পাথরের বন ছেড়ে কয়েক দিনের জন্য সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে নতুন উদ্মাম, উচ্ছলতা এবং রোমাঞ্চে নিজেকে একটু ঝালিয়ে এবং মনটাকে সম্পূর্ণ রিফ্রেশ করে নিতে একটুও দিধাদন্দে না ভুগে আজই ঘুরে আসুন প্রাকৃতিক সৌন্দযের অপর নাম নিঝুম দ্বীপ!!! নাহলে যে অনেক কিছুই মিস করবেন।
No comments:
Post a Comment